Header Ads

Image result for header ad

২০২০ সালের সেরা একটা সিনেমা


অসাধারণ! অসাধারণ! অসাধারণ! আজ২০২০ সালের সেরা একটা সিনেমা দেখলাম, থাপ্পার! এটাকে শুধু অসাধারণ বললেও খুব কম বলা হয়। দুর্দান্ত,সাহসী, প্রথাবিরোধী এক সিনেমা এই থাপ্পার! এটা শুধু একটা সিনেমা নয়, এটা হল সেই আদ্দিকাল থেকে চলা আসা অতি অমানবিক পুরুষতন্ত্রের প্রতি এক কষা থাপ্পর,পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি থাপ্পর!এটা হল মেয়েদের, নারীদের, আমাদের অসহায় মায়েদের, নিরুপায় বোনেদের অসহায়ত্বের গল্প, তাদের আত্মসম্মানের গল্প, ব্যক্তিত্ববোধের গল্প, একটি মেয়ের একা ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ! সর্বোপরি সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি ট্যাবু ভাঙ্গার গল্প হল এই থাপ্পার!
.
ট্যাবুটা কি? ট্যাবুটা হল অবৈধ, অন্যায্য পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নারীদের কথা না বলা, পুরুষের কথ্য, অকথ্য, দৃশ্যমান, অদৃশ্যমান অন্যায় অত্যাচার মুখ বুজে সয়ে যাওয়া! যেন নারীর আরেক নাম সর্বসহা! এটাই যেন নারীর আরেক ভূষণ! এমনটাই তো আমরা দেখে আসছি অনন্তকাল ধরে। কিন্তু সেই ভূষণ ছু্ঁড়ে ফেলার সময় এসেছে এবার। সেটারই আহবান জানানো হয়েছে এই মুভিতে অসাধারণ শিল্পীত, পরিশিলীত এবং যথাযথ যৌক্তিক উপায়ে।
.
যদিও মুভিতে দেখানো সেই যুক্তি অনেকেরই মনোঃপূত হয়নি। আপনাদেরও অনেকেরই হয়তো ভালো লাগবেনা! নারীর অধিকার, নারীর আত্মসম্মানকে কেন্দ্র করে বানানো এই সিনেমাটা শুধু পুরুষরা কেন, অনেক নারীরাও হজম করতে পারেনি,পারবেনা! কারণ ওই যে অভ্যাস, দীর্ঘদিন ধরে পুরুষতন্ত্রে অভ্যস্ততা ! আর সেকারণেই হয়তো এই অসাধারণ মুভিটি বক্স অফিসেও হয়েছিলো ব্যর্থ।
.
মুভি দেখে অনেকেই চরম বিরক্তি আর বিস্ময় প্রকাশ করে হয়তো বলবে, 'এইটা কোনো কথা? একটা থাপ্পরের জন্য ডিভোর্স? হাউ লেইম! তাদের জন্য বলছি হ্যা, একটা থাপ্পরের জন্যেও ডিভোর্স হতে পারে! কেননা পার্টনারের গায়ে হাত তোলার অধিকারটা কেউ কাউকে দেয়নি। এটা পুরুষতন্ত্রের বানানো অন্যায্য অধিকার!
.
আপনি যদি পুরুষ হন একবার কল্পনা করুন তো ভরা মজলিশে আপনার স্ত্রী রাগের বশে আপনার গালে কষে একটা থাপ্পর দিলো, কেমন লাগবে আপনার? মাথায় আগুন ধরে যাবেনা? ক্ষোভে ফেটে পরবেননা আপনি? এরপর কি করবেন আপনি? হাসতে হাসতে, নাচতে নাচতে ক্ষমা করে দেবেন তাকে? জি না মোটেও তা করবেনা জানি, যদি না আপনি সক্রেটিস টাইপের মহাপুরুষ না হোন! তাহলে একটা মেয়ে মানুষ কেন এতো সহজে মেনে নেবে বিষয়টা?
.
আরো পড়তে এখানে ক্লিক করুন

মুভি দেখে আপনার মনে হতে পারে, স্বামীটা রাগের মাথায়, এক্সিডেন্টালি স্ত্রীকে থাপ্পর দিয়েছে! হ্যা এক্সিডেন্টালিই ঘটেছে ব্যাপারটা! কিন্তু এর বাইরেও ব্যাপার আছে! এক্সডেন্টালি স্ত্রীকে থাপ্পর দেয়া যাবে এই চেতনা কোথা থেকে এসেছে ভাবুন তো! হ্যা এটা এসেছে অবচেতনভাবে সেই পুরুষতান্ত্রিক ভাবনা থেকে, যেখানে ভাবা হয় পুরুষরা রাগের মাথায় স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতেই পারে, যা কিছু করতে পারে। কিন্তু এটা তো সামান্য ঘটনা । সংসারে এটা হরহামেশাই হয়ে থাকে। জি না মহামান্য, এটা সামান্য ঘটনা নয়। সরি টু সে, আমি নিজে পুরুষ হয়েও এটা মানিনা, স্বীকার করিনা, আপনি যতই আমাকে গালভরা যুক্তি দেখাননা কেন।
.
মুভির কথা বাদ দেন। আপনার পরিবার, সমাজ, দেশের দিকে নজর দেন। এখানে মেয়েরা যদি তাদের সাথে প্রতিনিয়ত হওয়া অবিচারের ন্যায্য প্রতিবাদ শুরু করে তবে কয়টা সংসার টিকবে বলে মনে হয় আপনার? আমার মতে তো ৭০% সংসারই টিকার কথা না। এই সংসারগুলো টিকে আছে শুধুমাত্র কেবলমাত্র, একমাত্র মেয়েরা ফিনান্সিয়ালি নিরুপায় বলে।নইলে কবেই প্রতিটা মেয়ে সংসারের মুখে ঝাঁটা মেরে চলে যেতো যে যার মত! এবং আমার মতে সেটা মোটেও ভুল কিছু হতো না।
.
হয়তো ভাবছেন আমি বড্ড নারীবাদী ভাব দেখাচ্ছি। না রে ভাই আমি এখনকার এই তথাকতিত আধুনিক, লেইম নারীবাদে বিশ্বাসি না। আমি শুধু বলতে চাইছি যে আমাদের সমাজে বেশিরভাগ নারীদের সাথে যা হয় তা স্রেফ অন্যায়! আপনি হয়তো দেখেননি কিন্তু আমি দেখেছি পুরুষতন্ত্রের কি ভয়াল রুপ! দেখেছি আমার মা, চাচি, জেঠিদের ওপর চালানো আমার বাবা, কাকা, জেঠাদের অত্যাচারের স্টিম রোলার! দেখেছি সামান্য কারণে বাবা, কাকারা 'হাজার বছর ধরে' উপন্যাসের আবুলের মত কিভাবে মা, কাকিদের পিটিয়ে হাড়গোর ভেঙ্গে দিত।আবার উল্টো তারাই রাগ করে বাসায় খাওয়াদাওয়া বন্ধ করতো।পরে সেই মা কাকিদেরই তাদের রাগ ভাঙ্গাতে হত। এটা হল গ্রামাঞ্চলের চিরাচরিত দৃশ্য। আচ্ছা গ্রামের এসব, অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত মানুষদের কথা না হয় বাদই দিলাম। শহুরে শিক্ষিত সমাজগুলোতে আপাত সুখী সুখী ভাব ধরা মেয়েগুলি কি আসলেই সুখী?তারা কি স্বামীদের দ্বারা লাঞ্চিত, অপমানিত,অপদস্থ হয়না? হয়, অবশ্যই হয়। সেটাও দেখানো হয়েছে মুভিতে।
.
আলোচ্য মুভি থাপ্পার এক শহুরে সুখী দম্পত্তিরই গল্প! আসলে একটা না, কয়েকটা সংসারের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই মুভি! মুভির মূল চরিত্র অমৃতা আর বিক্রমের ক্রাইসিসকে কেন্দ্র করে পরিচালক দেখিয়েছেন অমৃতার লইয়ার নেত্রা জ্যায়সিং এর আপাত গ্লামারাস,সাক্সেসফুল সুখী জীবনের অন্ধকার দিক যা কারোরই চোখে পড়েনা।
মুভিতে দেখা যায় কাজের মেয়ে সুনিতার কি মানবেতর সংসার জীবন!
.
এই মুভিতে একটা চরিত্র মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে যায় সেটা হল অমৃতার বাবা। একই সমাজে একজন ভিন্ন মতাবলম্বী পুরুষ, যিনি নারীকে যথাযথ শ্রদ্ধা করেন, মেয়ের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক সাপোর্ট দেন। আসলে আমাদের সমাজে মেয়েরা ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পায়না এমন একটা সাপোর্টের অভাবেই। কেউ তাকে সাপোর্ট করতে চায়না। সবাই চায় যত যাই হোক মেয়েরাই সমঝোতা করবে, সব মেনে নিবে, কেননা এটাই নিয়ম। খুব কম মানুষই দেখবে পুরুষের ভুল। মুভিতে দেখানো হয়েছে মিউচুয়াল ডিভোর্স নেয়াটাও কত কঠিন। পুরুষের বিরুদ্ধে যাওয়াটাও কি ভয়াভহ! ভিক্টিমই উল্টো কতটা ব্লেইমিং এর শিকার হতে পারে সেটাও আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে মুভির পরিচালক অনুভব সিনহা!
.
যাইহোক মুভিটা সবারই দেখা উচিৎ বলে মনে করি। অত্যন্ত যুগোপযুগী একটা মুভি এই থাপ্পার। মুভিতে দেয়া মেসেজ আপনি গ্রহণ করবেন নাকি করবেননা তা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তথাপি এই মুভি দেখলে হয়তো আপনার একটা নতুন চিন্তার দুয়ার খুলবে। শুধু আপনি না, আপনার পরিবার, বাবা, মা, শ্বশুর শাশুড়ি, আপনার টিনেজ সন্তানকে নিয়ে এই সিনেমা দেখুন। তাদেরকেও ভাবতে শেখান যে পার্টনারের গায়ে হাত তোলার অধিকার কারো নেই।কোনোভাবেই না! তারাও শিখুক পার্টনারকে কিভাবে রেসপেক্ট করতে হয়, কখন সরি বলতে হয়, কিভাবে সরি বলতে হয়! সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর সরি বলে আর ফায়দা নেই!
.
আর হ্যা শুধুমাত্র একটা থাপ্পরের কারণেই ডিভোর্স এটার উপরই পরিচালক মূলত ফোকাস করেননি। শুধু থাপ্পড় এর কারণে অমৃতাও ডিভোর্স চায়নি। ডিভোর্স চাওয়ার পেছনে আরো অনেকগুলো কারণ ছিল, পরিচালক সেই কারণগুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন পুরুষরা অন্যায় করার পরেও নারীদের প্রতি পুরুষের কেমন দৃষ্টিভঙ্গি, সমাজের কেমন প্রতিক্রিয়া ! সোজা কথায় এটা হল পুরুষতন্ত্রের পোস্টমর্টেম!
.
মুভিতে খেয়াল করে দেখবেন যে থাপ্পড় খাওয়ার পরেই কিন্তু অমৃতা ডিভোর্স চায়নি। সে পরিস্থিতি সামলে নিতে একটু সময় চেয়েছিল বিক্রমের কাছে। কিন্তু বিক্রম সেই সময় টা দিতে চায়নি। বিক্রম ক্রমেই পরিস্থিতিটা নোংরামির দিকে নিয়ে যায়। অমৃতার বাবার বাড়িতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায় ফিরে আসার জন্য। আরো কিছু ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় বিক্রমের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে অমৃতা। তাছাড়া ওই ঘটনার পর বিক্রম ঠিকমতো সরিটাও বলেনি। সে পরবর্তীতে কয়েকবার এমনভাবে ঘটনাটার এক্সপ্লানেশন দিয়েছে যে এমনটা ঘটা খুবই স্বাভাবিক। তার মধ্যে সত্যিকারের অনুতপ্ত বোধটা দেখা যায়নি , যেটা একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে দেখা যায়। আমাদের সমাজেও কিন্তু এমন অনেক পুরুষ আছে যারা বসের সামনে হুজুর হুজুর করে সরি সরি করতে পারে , কিন্তু পার্টনারের কাছে সরি বলতে গেলে তার পুরুষত্ব কমে যায়। যত ইগো, আধিপত্য, রাগ ,ক্ষোভ , হতাশা ঝেড়ে ফেলার পাত্র যেন বউ।
.
তবুও অনেকেই বলবে, 'তাই বলে থাপ্পরের জন্য ডিভোর্স?' আরে ভাই না, শুধুমাত্র থাপ্পরের জন্য ডিভোর্স না। অনেক বিষয়ের জন্য ডিভোর্স। নিশ্চয়ই জানেন পৃথিবীতে এখন প্রতিনিয়ত অসংখ্য ডিভোর্স হয়, সেগুলি নিশ্চয়ই শুধুমাত্র একটা থাপ্পরের জন্য হয় না। আর জেনে রাখুন সব মেয়ে অমৃতার মতো প্রখর আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন না একটা থাপ্পর এর কারণেই ডিভোর্স চাইবে। একেকজনের মন মানসিকতা একেক রকম। হ্যা ডিভোর্স নিশ্চয়ই কোন উৎকৃষ্ট সমাধান না। বরং ডিভোর্স বেশিরভাগ সময় নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে। এখানে অমৃতা ও হয়তো চাইলে সেক্রিফাইস করতে পারতো, সমঝোতা করতে পারতো । কিন্তু সে অনেক ভেবেচিন্তে ডিসিশন নিয়েছে ডিভোর্সের। এটা তার পার্সোনাল পার্সোনাল চয়েস। আমার মতে মুভি যে মেসেজ দিতে চাচ্ছে সেটা হল যত যাই হোক পাটনার এর গায়ে হাত তোলা যাবে না, এবং এক্সিডেন্টালি এমনটা ঘটলেও সেটাকে কোনভাবেই পুরুষের অধিকার হিসেবে জাস্টিফাই করা যাবে না।
.
মুভিতে তাপসী পান্নুর যা অভিনয়! আহা! তার বিষণ্ন চোখ, বিনীত অভিযোগ, অসহায় আবেগ, অনুভূতি সব মন ছুঁয়ে যায়! বাকি সবার অভিনয়ই আপ টু দ্যা মার্ক! দেখে ফেলুন সুন্দর সিনেমটা আর ভাবুন, ভাবতে শিখুন, ভাবা প্রাক্টিস করুন!


Md Ohedul Islam Wahid

No comments

Theme images by RBFried. Powered by Blogger.