Header Ads

Image result for header ad

তোমার জন্য ভালবাসা

তোমার জন্য ভালবাসা
পিয়া আর নিরব একই ব্যাচের স্টুডেন্ট। দু'জন ই বেশ মেধাবী। তাই জন্য পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে পড়ছে। একসাথে গ্রুপ স্ট্যাডি করে ওরা। কিন্তু, পিয়া খুব ভালবাসে নিরব কে। আর এদিকে নিরব পিয়া কে একদম পাত্তা দেয় না। বন্ধু তো বন্ধুই। বন্ধু কিভাবে প্রেমিকা হয়?
ওরা তখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। পিয়া ম্যানেজমেন্ট বইয়ের ভিতর রবি ঠাকুরের দুটো লাইন লিখে দিলো গোটা গোটা হরফে চৈত্রের এক বিকেলে।
নিরব,
প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।
ইতি,
পিয়া।
পরদিন মিডটার্ম। বইয়ের ভিতর এই চিরকুট পেয়ে নিরব খুব রেগে গেল। কল দিয়ে পিয়া কে খুব করে বকা দিয়ে দিলো। পিয়া অনেক বুঝিয়েও নিরব কে ম্যানেজ করতে পারেনি। একটা কথা পিয়ার খুব মনে দাগ কাটে। নিরব আর পিয়া সেইম এজ তাই জন্য তাদের প্রেম সম্ভব না। প্রেম হলেও বিয়ে হবে না। অনেক নাকি ঝামেলা।
পিয়া সেকেন্ড ইয়ারে ড্রপ দিল। সেমিস্টার ফাইনাল না দেয়ায় কিছুটা মন খারাপ করে নিরব। এদিকে পিয়া ক্যাম্পাসে আসে না। কেমন যেন পিয়া কে মিস করছিলো নিরব। তাই পিয়ার বান্ধুবী তমার থেকে নিরব পিয়ার বাসার ঠিকানা জোগাড় করে। এর মাঝেই একদিন হুট করে বই দেয়ার বাহানায় পিয়ার বাসায় আসে নিরব।
পিয়া মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে, ছিমছাম গোছানো বাসা। নিরব ড্রয়িং রুমে বসে আছে। এর মাঝে পিয়া এলো।
নিরব: সেমিস্টার ফাইনাল দিলি না কেন, মিড ও দিলি না? ক্যাম্পাসে আসিস না কেন?
পিয়া: আমি সেমিস্টার ড্রপ দিলাম। তুমি বলেছিলে সেইম এজ হলে ভালবাসা হয় না। আচ্ছা, নিরব আমি তো এখন তোমার একবছর জুনিয়র হয়ে গেলাম ক্যাম্পাসে। এখন কি আমাকে ভালবাসতে পারবে?
নিরব: পিয়া, আমি তোকে বন্ধুর চোখে দেখি, ভালবাসি না। আর তুই ছেড়ে তুমি বলছিস কেন?
পিয়ার চোখ ছলছল করছিলো একথা শুনে। চোখের জল লুকিয়ে পিয়া জিজ্ঞেস করল,
পিয়া: চা খাবি?
নিরব: না, আমি বরং আজ উঠি। তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো, তাই দেখে গেলাম আর তোর জন্য ম্যানেজমেন্ট বইটা নিয়ে এসেছি।
পিয়া: একটা কথা বলবো?
নিরব: হু, বল।
পিয়া: আমাকে আর তুই বলবি না। 'তুমি' বলবি। ভালবাসার মানুষের মুখে তুই শুনতে ভালো লাগে না।
নিরব: তুই পাগল হয়ে গেছিস। চললাম আমি।
নিরব চলে যাবার পর পিয়া রুমে গিয়ে খুব কেদেছে। একটা চিঠি লিখলো নিরব কে উদ্দেশ্য করে।
নিরব,
নশ্বর এ পৃথিবীতে তোমাকে আমার পাওয়া হবে না এটা আমি বুঝে গিয়েছি। বিশ্বাস কর এ পৃথিবী টা খুব বিষন্ন লাগে তুমি ছাড়া। সব বন্ধুরা মিলে যখন প্যারিস রোডে হাটতাম, আমি শুধু তোমাকেই দেখতাম। আমি তোমাকে বড্ড বেশি ভালবাসি। এ জীবনে তোমাকে পাব না, হয়তো মৃত্যুর পর তোমাকে পাব। আমাকে কেন ভালবাসলে না তুমি?
ভালো থেকো।
ইতি,
পিয়া।
চিঠি টা পিয়া সেই ম্যানেজমেন্ট বইতে রেখে নিরব কে মোবাইলে মেসেজ লিখে তিন দিন পর বই টা এসে নিয়ে যেতে। নিরব ফিরতি মেসেজে পাঠায় ঠিক আছে বলে। এরপর খুব ঠাণ্ডা মাথায় পিয়া আত্মহত্যা করে।
তিন দিন পর নিরব আবার পিয়ার বাসায় আসে, আর জানতে পারে পিয়া আত্মহত্যা করেছে। বই টা নিয়ে নিরব হলে চলে আসে। আসার পথে বইয়ের ভিতর চিঠি পায় নিরব। চিঠি টা পড়ে প্রথম বার নিরবের চোখ ভিজে উঠে। সেদিন থেকে নিরব নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করে। আর কয়েক দিন টানা ঘুমোতে পারে না। সব সময় পিয়ার হাসি নিরবের কানে বাজতে থাকে। আর ওর নূপুরের শব্দ। নিরব বুঝতে পারে পিয়াকে খুব ভালবাসে নিরব। কিন্তু এখন যে খুব দেরি হয়ে গেছে। খুব বৃষ্টি নামলো এর মাঝে। নিরব হলের মাঠে গিয়ে খুব ভিজলো আর চিৎকার করে কান্না করলো।
সেদিনের পর প্রায় ১৪ মাস নিরব পাগলের মতো ছিল। খেতে পারতো না, ঘুমোতে পারতো না। শুধু একটা বার পিয়া কে দেখতে চাইতো। আর কিচ্ছু না। এদিকে ইয়ার ড্রপ গেল নিরবের। আচ্ছা পিয়া কি নিরবের এমন জীবন টাই চেয়েছিল? না, তা চায়নি।
নিরব ঘুমিয়ে আছে, হঠাৎ এতদিন পর পিয়া কে স্বপ্নে দেখলো। পিয়া নিরব কে বলল, "পাগলামি করছ কেন? আমি তো জানি তুমি শুধু আমাকেই ভালবাসো। আর আমি তো সবসময়ই তোমার আশে পাশেই থাকি। প্লিজ নিজেকে ধ্বংস করে দিও না। আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। আর আমি প্রমিজ করছি, তুমি যখন ই চাইবে আমি তোমার সামনে আসবো। খুব ভালো কিছু কর। জীবনে অনেক বড় হউ। আমি তোমার পাশে আছি।"
নিরবের ঘুম ভেঙে গেল। উঠে খুব খুঁজেছে পিয়া কে। পিয়া কে না পেয়ে সেদিন খুব কেদেছে আবার। এরপর বিষন্নতা আর ঘুমের ওষুধের সাথে আড়ি দেয় নিরব। আর পিছন ফিরে তাকায়নি। ভালো রেজাল্ট করে বিবিএ আর এমবিএ তে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে পড়তে ভিজিট করুনঃ
নিরবের জীবন পাঁচ বছর আগেও ছিল ছন্নছাড়া। আজ নিরব উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাচ্ছে। কিন্তু, নিরবের জীবনে সাফল্য নাও আসতে পারতো। হতে পারতো ডিপ্রেশন আর ঘুমের ওষুধে আসক্ত হয়ে আছে নিরব। আজ নিরবের এই ভালো থাকার জন্য কোথাও না কোথাও পিয়ার অবদান আছে।
পিয়ার মোবাইল টা বন্ধ। সেই বন্ধ সিমে রোজ একটা মেসেজ পাঠায় নিরব। আর তাতে লিখা থাকে, "অনেক ভালবাসি তোমাকে।"

Jasmin Ruby

No comments

Theme images by RBFried. Powered by Blogger.